আমেরিকা , বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫ , ২৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন চায় ইসলামী আন্দোলন দেশের সব মাদরাসায় দুই দিনব্যাপী বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নির্দেশ আমরা মিশিগানের জন্য বিজয় নিয়ে বাড়ি আসব : ট্রাম্প  হুইটমারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প, তবে গাড়ি শুল্ক থেকে পিছু হটেননি ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের ২২ শিক্ষার্থীর ভিসা, আইনি বসবাসের মর্যাদা বাতিল র‍্যাপ শিল্পী সাদা বেবি গ্রেপ্তার আজ ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাত করবেন গভর্নর হুইটমার  মিশিগানের অন্তত ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক ছাত্র ভিসা বাতিলের সাথে লড়াই করছে বিশ্বকে বদলানোর মতো দুর্দান্ত আইডিয়া আছে বাংলাদেশের কাছে বান্ধবীর কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ, ফ্লিন্টের এক ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মুখোমুখি সাউথফিল্ডের প্লাম হলো মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড ঢাকায় যাচ্ছেন ট্রাম্পের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় সারাদেশে গ্রেপ্তার ৪৯ ইউএম আন্তর্জাতিক ছাত্রের ভিসা 'বিনা নোটিশে' বাতিল ডেট্রয়েটে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় সন্দেহভাজন গ্রেফতার ডেট্রয়েট বিমানবন্দরে ডিয়ারবর্নের আইনজীবীকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ বাংলাদেশে মার্কিন নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি শুল্ক ৩ মাস স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে ট্রাম্পকে ড. ইউনূসের চিঠি গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের ডেট্রয়েটের গলিতে পোড়া গাড়ি থেকে তিন লাশ উদ্ধার

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ডাক্তার সালেহ ও হীরেন্দ্র রায়কে আমরা যেন ভুলে না যাই

  • আপলোড সময় : ২৭-০২-২০২৩ ০৩:৪৬:২২ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৭-০২-২০২৩ ০৩:৪৬:২২ পূর্বাহ্ন
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ডাক্তার সালেহ ও হীরেন্দ্র রায়কে আমরা যেন ভুলে না যাই

ছবি : ডাঃ সালেহ উদ্দিন আহমেদ

হবিগঞ্জ, ২৯ এপ্রিল :  শহীদ ডাক্তার সালেহ উদ্দিন আহমেদ। হবিগন্জ আওয়ামীলীগের প্রাণ পুরুষ ছিলেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে  হবিগন্জ কন্টোরুমের প্রধান দায়িত্ব তিনিই পালন করতেন। অনন্য মেধার অধিকারী ডাঃ সালেহ উদ্দিন আহমেদ  ছাত্রাবস্থায়ই দেশমাতৃকার টানে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। টকবকে যুবক ছাত্রলীগের তেজস্বী দীপ্তিময় এক নেতা। 

১৯৫৬ সালে হবিগন্জ সরকারী উচ্চবিদ্যালয় থেকে মেট্রিক এবং ১৯৫৯ সালে সিলেট মুরারীচাঁদ কলেজ থেকে ১ম বিভাগে আই এ পাশ করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এম বি বি এস  পাশ করেন। সরকারী চাকুরী না করে হবিগন্জের মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার মানসে প্রাইভেট চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। তাঁর উদ্যোগেই হবিগন্জে প্রথম স্থাপিত হয় আধুনিক ক্লিনিক।  হবিগন্জে যেখানে মাইনর কোন অপারেশনের ব্যবস্থা ছিলনা,  সেখানে ডাঃ সালেহ উদ্দিন আহমেদ ক্লিনিক স্থাপন করেন। যার নাম ছিল 'আহমদ ক্লিনিক'। আহমদ ক্লিনিকে হবিগন্জের মানুষের অপারেশনের সমস্যা অনেকটাই সুফল বয়ে আনে। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন। আওয়ামীলীগের তরুণ কর্মীদের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে তরুণ নেতাকর্মীদের আইডল হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন।
১৯৬৯ সালে ডাঃ সালেহ উদ্দিন আহমেদকে হবিগন্জ পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মনোনিত করা হয়। পাকিস্থানী  হায়েনাদের হাতে শাহাদাৎবরণ করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ওই পদে বহাল ছিলেন। ১৯৪১ সালে ডাঃ সালেহ উদ্দিন আহমেদ জন্ম গ্রহন করেন।  তাঁর পিতা  বিশিষ্ট বস্ত্র ব্যবসায়ী আলহাজ্ব  মওলানা  রফিক উদ্দিন আহমেদ। মাতা মোছাম্মদ আশারাফুন্নেছা। ৮ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। 
ডাঃ সালেহ উদ্দিন আহমেদের এক বন্ধু ছিলেন চুনারুঘাট উপজেলার আহমদাবাদ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ নেতা মরহুম আব্দুল হামিদ তালুকদার। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতাও করতেন। তিনি জীবিত কালীন সময়ে ডাঃ সালেহ উদ্দিন আহমেদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা,  দূরদর্শিতা  আর বাঙ্গালী জাতীয়তাবোধ সম্পন্ন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী সম্পর্কে প্রাশয়ই আলোচনায় নিয়ে আসতেন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে যখন নিরস্ত্র নিরীহ মানুষ দেশ ছেড়ে ভারতের দিকে যাত্রা শুরু করে,  মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণের জন্য ভারতমুখী, তখনও ডাঃ সালেহ উদ্দিন আহমেদ হবিগন্জে কন্টোলরুমের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। পাকসেনাদের আগমন বার্তা সার্বক্ষণিক তাঁকেই রাখতে হতো। পাক সেনারা যখন হবিগন্জের খুব কাছাকাছি সংবাদ পান তখনই মনস্থির করেন সীমান্ত অতিক্রম করতে হবে। কিন্তু ভাবতে পারেননি হায়েনাদের দল অল্প সময়ের মধ্যে শায়েস্থাগন্জ এলাকায় চলে আসতে পারে। 


চিকিৎসকদের নামের তালিকায় ৭২ নম্বরে ডাঃ সালেহ উদ্দীনের নাম রয়েছে/ছবি : সংগৃহীত 

২৯ এপ্রিল তিনি ও তাঁর অপর সহযোগী পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হীরেন্দ্র রায় চৌধুরী একটি ট্রাক যোগে শায়েস্থাগন্জ ফাঁড়ি পথ ধরে চুনারুঘাট সীমান্তের দিকে রওয়ানা হন, তখন শায়েস্থাগন্জ রেল ক্রসিং-এ পাকিস্থানী সৈন্যদের হাতে ধরা পড়েন। তাঁদেরকে শায়েস্থাগন্জ হাই স্কুলে আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরে লস্করপুর রমজান আলীর বাড়ীর একটি ব্যাংকারে তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় পাকিস্থানী সৈন্যরা তাদের ট্রাক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিয়ে যাওয়া খাদ্য, অর্থ পেয়ে ধরে নেয় এরা উভয়ই আওয়ামীলীগের এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃস্থানীয়। যে কারনে নির্যাতন যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি নির্মমভাবে হত্যা করে একটি ব্যাংকারে মাটি চাপা দিয়ে রাখে।
স্বাধীনতার পর লস্করপুর ব্যাংকার থেকে ডাঃ সালেহ ও হীরেন্দ্র চৌধুরীর বিকৃত দেহ তুলে আনেন স্বজন পরিজন। ডাঃ সালেহ উদ্দীনকে দাফন করা হয় তাঁর গ্রামের বাড়ী নিজামপুরে পারিবারিক কবরস্থানে আর হীরেন্দ্র চৌধুরীর মরদেহ ধর্মীয় বিধানমতে দাহ করেন তাঁর স্বজনেরা। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় হবিগন্জে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম দুই সংগঠকের এখনো স্থান হয়নি শহীদ তালিকায়। স্বাধীনতার প্রাক্কালে হবিগন্জের এই দুই জন স্বাধীনতার অকুতোভয় বীর সন্তানদের কেউ আজ স্মরণ করেনি, নেয়নি কোন খোঁজ। তাদেঁর নাম শহীদ তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়নি আজো। মেডিকেল ছাত্র স্মৃতি ফলকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসকদের নামের তালিকায় ৭২ নম্বরে ডাঃ সালেহ উদ্দীনের নাম রয়েছে।
এভাবেই আমাদের সূর্য সন্তানদের বীরত্বগাঁথা অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা তাঁদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁদের বীরত্বগাঁথা তুলে ধরতে চাই।  শহীদ তালিকায় তাদেঁর নাম অন্তর্ভূক্তি করার দাবীও জানাই। 
স্বাধীনতা যুদ্ধের সফল সংগঠকদ্বয়কে শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় আগামী প্রজন্ম যেন ভুলে না যায় , তাঁদের সেই ত্যাগের কথা, বাঙ্গালী, বাংলার স্বাধীনতা অর্জনের  গৌরবগাঁথা  ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা।



নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য

সর্বশেষ সংবাদ